মাত্র ৮০০০ টাকায় আইফোন ৮ তৈরি করেছি চীন থেকে! এটি সম্পূর্ণরূপে অ্যাসেম্বল করা ডিভাইস, যা বিভিন্ন পুরোনো এবং নতুন পার্টস ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এই নিয়ে আমাদের আগেও একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছিল কীভাবে ফোনটি তৈরি করা হয়।
আজকের এই পর্যালোচনায় জানবো, এক মাস ব্যবহার করার পর ফোনটির অবস্থা কেমন, এটি কতটা কার্যকর, এবং এটি প্রকৃতপক্ষে ব্যবহারযোগ্য কিনা।
ফোনের ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
1. ওজন: মাত্র ১৪৫ গ্রাম, যা খুবই হালকা।
2. ডিসপ্লে: ৪.৭ ইঞ্চি IPS Retina LCD, ৬২৫ নিটস ব্রাইটনেস।
3. বডি: মেটাল বডি, যা ফোনটিকে প্রিমিয়াম ফিল দেয়।
4. প্রোটেকশন: স্ক্র্যাচ রেসিস্ট্যান্ট গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে, তবে ফেলে দিলে ভাঙতে পারে।
ওয়াটারপ্রুফ ফিচার নেই
মূল আইফোন ৮ বাজারে আসে আইপি৬৭ ওয়াটারপ্রুফ রেটিং সহ। তবে যেহেতু এটি চীনে অ্যাসেম্বল করা হয়েছে, এটি ওয়াটারপ্রুফ নয়। ফলে পানির সংস্পর্শে আনলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।
হার্ডওয়্যার ও পারফরম্যান্স
• প্রসেসর: Apple A11 Bionic (Hexa-core, 10nm)।
• র্যাম: ২ জিবি।
• স্টোরেজ: ৬৪ জিবি, ১২৮ জিবি, ২৫৬ জিবি (ভিন্ন ভিন্ন ভেরিয়েন্ট)।
• অপারেটিং সিস্টেম: iOS 16.7.10 (সর্বশেষ আপডেট)।
এই ফোনটি ৮০০০ টাকায় কেনা হলেও পারফরম্যান্স ১৫–২০ হাজার টাকার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের চেয়েও ভালো। ডেইলি ইউজ, মিডিয়া কনসাম্পশন এবং সাধারণ গেমিং-এর জন্য উপযুক্ত।
গেমিং ও মাল্টিটাস্কিং
PUBG, Call of Duty, Free Fire – এসব গেম চালানো সম্ভব, তবে লো সেটিংসে। ২ জিবি র্যাম থাকায় মাল্টিটাস্কিং কিছুটা সমস্যা করে। একসঙ্গে অনেক অ্যাপ চালালে ল্যাগ দেখা যায়। তবে সাধারণ কাজের জন্য এটি যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স
• রিয়ার ক্যামেরা: ১২ মেগাপিক্সেল, OIS (Optical Image Stabilization) সহ।
• ভিডিও রেকর্ডিং: 4K 60FPS পর্যন্ত সমর্থন করে।
• ফ্রন্ট ক্যামেরা: ৭ মেগাপিক্সেল, ভালো মানের সেলফি তুলতে পারে।
এই দামের মধ্যে 4K ভিডিও রেকর্ডিং করা সত্যিই চমকপ্রদ। ক্যামেরা বেশ ভালো কাজ করেছে, তবে কম আলোতে কিছুটা সমস্যা দেখা গেছে।
ব্যাটারি ব্যাকআপ ও চার্জিং
• ব্যাটারি ক্যাপাসিটি: ১৮২১ এমএএইচ।
• চার্জিং টাইম: ২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ চার্জ হয়।
• ব্যাটারি ব্যাকআপ: সাধারণ ব্যবহারে ৬-৮ ঘণ্টা, হেভি ইউজে ৪-৫ ঘণ্টা।
মাত্র ৩০০ টাকার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তা এখনো ভালো ব্যাকআপ দিচ্ছে।
Also Read : স্যামসাং গ্যালাক্সি A06: নতুন ফোন, কিন্তু আসলেই নতুন কিছু আছে কি?
সাউন্ড ও মাইক্রোফোন ইস্যু
• স্টেরিও স্পিকার: লাউড ও পরিষ্কার সাউন্ড দেয়।
মাইক্রোফোন সমস্যা:
কল করার সময় অপরপ্রান্তের মানুষ মাঝে মাঝে শব্দ ঠিকমতো শুনতে পায় না। ভিডিও রেকর্ডিং-এর সময়ও কিছুটা সমস্যা দেখা গেছে।
ফোনের দুর্ঘটনা ও রিপেয়ার
এক মাস ব্যবহারের মধ্যে একবার ফোনটি মাটিতে পড়ে গিয়ে ডিসপ্লের উপরের গ্লাস ভেঙে যায়। পরে বাংলাদেশে গ্লাস পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ফোনটি এখন আগের মতোই নতুন দেখাচ্ছে।
৮০০০ টাকায় কেনা ফোনের কি সত্যিই দাম অনুযায়ী পারফরম্যান্স ভালো?
হ্যাঁ! এই বাজেটে এত ভালো পারফরম্যান্স আশা করা যায় না। পারফরম্যান্স অনেক ভালো। ক্যামেরা মানসম্মত। ব্যাটারি ব্যাকআপ মোটামুটি ভালো।
তবে কিছু নেগেটিভ দিকও রয়েছে –
• ওয়াটারপ্রুফ নয়।
• মাল্টিটাস্কিং কিছুটা দুর্বল।
• মাইক্রোফোনের সমস্যা আছে।
FAQ (প্রশ্নোত্তর বিভাগ)
১. ৮০০০ টাকায় আইফোন ৮ কোথা থেকে কিনলেন?
→ এটি কোনো অফিসিয়াল ফোন নয়। আমি এটি চীনে বিভিন্ন পুরোনো ও নতুন পার্টস দিয়ে তৈরি করেছি।
২. বাংলাদেশে কি এমন ফোন পাওয়া যাবে?
→ না, বাংলাদেশে এইভাবে ফোন তৈরি করে বিক্রি করা হয় না। তবে দ্বিতীয় হাতের আইফোন কিনতে পারেন।
৩. এই ফোন কি ভালোভাবে কাজ করছে?
→ হ্যাঁ, সাধারণ ব্যবহারের জন্য এটি ভালোই পারফর্ম করছে। তবে ভারী কাজ ও গেমিং-এর জন্য খুব ভালো নয়।
৪. ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন?
→ নরমাল ইউজে একদিন চলতে পারে। তবে হেভি ইউজে ৪-৫ ঘণ্টার বেশি নয়।
৫. ক্যামেরা কেমন?
→ ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা থাকায় ভালো মানের ছবি ও ৪কে ভিডিও রেকর্ড করা সম্ভব।
৬. ফোনটি কি গরম হয়?
→ সাধারণ ব্যবহারে তেমন গরম হয় না, তবে চার্জিং ও গেমিং-এর সময় কিছুটা গরম হয়।
শেষ কথা – ৮০০০ টাকায় কি এই ফোন কেনা উচিত?
আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, মাত্র ৮০০০ টাকায় এত ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া কঠিন।
ভালো দিক:
✔ পারফরম্যান্স ভালো
✔ 4K ভিডিও রেকর্ডিং
✔ ব্যাটারি ব্যাকআপ মোটামুটি ভালো
✔ প্রিমিয়াম ডিজাইন
খারাপ দিক:
✘ ওয়াটারপ্রুফ নয়
✘ মাল্টিটাস্কিং দুর্বল
✘ মাইক্রোফোন সমস্যা
যারা কম বাজেটে একটি ভালো ফোন খুঁজছেন, তারা দ্বিতীয় হাতের আইফোন ৮ নিতে পারেন। তবে এইভাবে চীনে তৈরি ফোন বাংলাদেশে পাওয়া সম্ভব নয়।
আপনারা এই ফোন সম্পর্কে কী মনে করেন? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
Click Here Follow Us On Twitter